টিটেনাস কি?
কাটা-ছেড়া বা কোন ক্ষত তৈরি হলে টিটেনাস বা ধনুষ্টংকার হতে পারে। টিটেনাসের জীবাণু সাধারণত মাটি, ময়লা এবং পশুর নিঃসৃত ময়লায় ছড়িয়ে থাকে। এই জীবাণু যদি কোন ক্ষতস্থানে সংক্রমিত হয় তবে টিটেনাস হয়। টিটেনাস কখনো মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। টিটেনাসের জীবাণু বিভিন্ন রকমের ক্ষত দিয়ে দেহে প্রবেশ করতে পারে। যেমন:
তীক্ষ বা সুচালো কোন কিছু দিয়ে তৈরী ক্ষত
আগুনে পুড়ে গেলে
লোহা জাতীয় ধাতব, নখের আঁচড় অথবা পোকার কামড় দিয়ে তৈরী ক্ষত দুর্ঘটনা থেকে তৈরী ক্ষত
ত্বকে কোন কাটা-ছেঁড়া হলে
আইভি ইনজেকশন দেয়ার স্থানে
নবজাতকের টিটেনাস:
প্রসবের সময় অস্বাস্থ্যকর ছুরি, ব্রেড বা অন্যান্য ধারালো কিছু দিয়ে নাড়ী কাটলে অথবা নাড়ী কাটার পর অস্বাস্থ্যকর কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করলে অথবা অপরিষ্কার হাতে প্রসব করালে নবজাতকের এবং মায়ের টিটেনাস হতে পারে।
টিটেনাসের লক্ষণ:
চোয়াল ও মাংসপেশীর সংকোচন। একেই লক জো (খঙঈক ঔঅড) বলে ‘
ঢাক গিলতে সমস্যা
পেটের, উরুর ও বাহুর মাংসপেশীর সংকোচন ও ব্যথা
শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা
অতিরিক্ত ঘাম মাথা ব্যথা
অস্বস্তিবোধ
টিটেনাসের ভয়াবহতা কি ?
টিটেনাসের কারণে মৃত্যুর হার ৪৩% থেকে ৭৩%। সা¤প্রতিককালে প্রায় ১১% টিটেনাসই মৃত্যুর কারণ। ব্যাকটেরিয়া দেহে প্রবেশ করার ৮ দিনের মধ্যে টিটেনাসের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এক্ষেত্রে অনেক সময় কয়েক মাস হতে পারে। তাই দেরী না করে দ্রæত টিটেনাস প্রতিরাধে করা উচিৎ।
টিটেনাস কিভাবে প্রতিরাধে করা যায় ?
ভ্যাকসিন নিয়ে পরিপূর্ণ ও যথাযথভাবে টিটেনাস প্রতিরাধে করা সম্ভব।
টিটেনাস ভ্যাকসিনের সময়সূচি
টিটেনাস প্রতিরোধ করার জন্য ৩টি প্রাথমিক ডোজ নিতে হবে।
১ম ডোজ: নির্ধারিত দিন
২য় ডোজ: ১ম ডােেজর ১-২ মাসের মধ্যে
৩য় ডোজ: ২য় ডােেজর ৬-১২ মাসের মধ্যে
বুস্টার ডোজ: ৩য় ডোজের ১০ বছর পর পর
* যারা পূর্বে টিটেনাস ভ্যাকসিন নেননি কাটা-ছেড়ার পর যত দ্রæত সম্ভব টিটেনাস ভ্যাকসিনের প্রাথমিক ৩টি ডোজ নিতে হবে। ১ম ডোজের সাথে টিটেনাস ইমিউনোগোবিউলিন দিতে হবে।
* যারা পূর্বে টিটেনাস ভ্যাকসিন নিয়েছেন এবং যদি ৫ বছর অতিক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে কাটা-ছেড়ার পর যত দ্রæত সম্ভব ১টি বুস্টার ডোজ নিতে হবে, যদি ৫ বছর অতিক্রান্ত না হয় তবে কোন ডোজ নিতে হবে না।
নবজাতকের টিটেনাস প্রতিরোধের জন্য ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের ৫টি টিটেনাস ভ্যাকসিন দেয়া হয়-
১ম ডোজ: ১৫ বছর বয়সে।
২য় ডোজ: ১ম ডোজের ১ মাস পর
৩য় ডোজ: ২য় ডোজের ৬ মাস পর
৪র্থ ডোজ: ৩য় ডোজের ১ বছর পর
৫ম ডোজঃ ৪র্থ ডোজের ১ বছর পর
* যেসব মহিলারাপূর্ণ ৫টি ডোজ স¤পন্ন করেছেন তাদের গর্ভকালীন সময়ে শুধুমাত্র ১টি বুস্টার ডোজ নিতে হবে।
* যদি পূর্বে টিটেনাস ভ্যাকসিন না নেয়া থাকে তবে গর্ভকালীন সময়ে টিটেনাস ভ্যাকসিনের এর ২টি ডাজে নিতে হবে।
১ম ডোজ: গর্ভাবস্থার ৬ষ্ঠ মাসে
২য় ডোজ: ১ম ডোজের ১ মাস পর
টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন
টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন হচ্ছে প্রস্তুতকৃত টিটেনাস অ্যান্টিবডি যা টিটেনাসের বিরুদ্ধে দ্রæত সুরক্ষা প্রদান করে। মানুষের অথবা প্রাণীর বডিতে টিটেনাস ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর, তার সেরাম থেকে অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করে টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন তৈরি করা হয়।
টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন কেন?
যেসব ক্ষেত্রে টিটেনাস হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি, সেখানে টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন দেওয়া হয় দ্রæত সুরক্ষার জন্য। কারণ টিটেনাস ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে নিজস্ব অ্যান্টিবডি তৈরি করতে বেশ কয়েক দিন সময় লাগে, এই সময়ে দ্রæত সুরক্ষার জন্য টিটেনাস ভ্যাকসিনের সাথে টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন দেওয়া হয়। কাটা-ছেরার অথবা ক্ষত এর পর, টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন দেয়া হয় –
যাদের টিটেনাস ভ্যাকসিনের ডোজ স¤পূর্ণ করা নেই
টিটেনাস প্রবণ ক্ষত এর ক্ষেত্রে
টিটেনাস-প্রবণ ক্ষত
টিটেনাস-প্রবণ ক্ষত বলা হয় নিচের ক্ষতগুলো –
যেসব ক্ষত ৬ ঘণ্টার বেশি সময় থাকে কিন্তু কোনরকম অস্ত্রোপচার অথবা চিকিৎসা শুরু করা হয় নাই
পাঙ্কচার টাইপ /গর্ভীর ক্ষত, খোলা ফ্রাকচার
সেপসিস
ক্ষত যা মাটির সঙ্গে দূষিত
জং পরা কোন কিছুতে অথবা পুরানো কোন কিছুতে কেটে গেলে বার্ন এবং ফ্রস্টবাইট এই সকল ক্ষেত্রে, দ্রæত সুরক্ষার জন্য টিটেনাস ভ্যাকসিনের সাথে অবশ্যই টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন দিতে হবে
টিটেনাস প্রবণ ক্ষত ব্যবস্থাপনা:
টিটেনাস-প্রবণ ক্ষত ব্যবস্থাপনার জন্য নিলিখিত পদক্ষেপগুলি করা উচিত।
ক্ষতস্থানে প্রচুর পরিমাণে পানি দিয়ে ১০ মিনিটের জন্য ধুতে হবে এবং তারপরস্যালাইন দিয়ে ক্ষতস্থানে ধুতে হবে।
কোনরকম পাটিক্যাল ক্ষতস্থানে থাকলে দ্রæত অপসারণ করতে হবে।
টিটেনাস ভ্যাকসিন এবং টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন দিতে হবে।
কখন এবং কিভাবে টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন দিতে হবে?
টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন সাধারন ক্ষততে দেওয়া উচিত নয়। টিটেনাস-প্রবণ ক্ষত যেখানে টিটেনাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেখানে টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন দিতে হবে। টিটেনাস অ্যান্টিটক্সিন যা ইকুইন এর সেরাম থেকে নেয়া হয়, সেক্ষেত্রে ডোজ ৩০০০-৫০০০ আইইউ মাংসপেশিতে দিতে হবে।
গভীর ক্ষত এবং গুরুতর ক্ষত এর ক্ষেত্রে ১০০০০-২০০০০ আইইউ পর্যন্ত ডোজ হতে পারে। যদি আক্রান্ত ব্যক্তির ওজন ৩০ কেজির কম হয়, সেক্ষেত্রে ১৫০০ আইইউ ডোজ দিতে হবে। হিউম্যান টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন মাংসপেশিতে দিতে হবে। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদেরকে টিটেনাস প্রতিরােেধ হিউম্যান টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন ২৫০ আইইউ ডোজ দিতে হবে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডােেজর পরিমাণ ৫০০ আইইউ পর্যন্ত দেওয়া লাগতে পারে। হবে।
টিটেনাসের চিকিৎসা
টিটেনাস রোগের লক্ষণ প্রকাশের সাথে সাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুর করা। উচিত। চিকিৎসার জন্য ক্ষতের তীব্রতার উপর নির্ভর করে টিটেনাস অ্যান্টিটক্সিন এর ডোজ ৫০,০০০ থেকে ১০০,০০০ আইইউ আংশিকভাবে শিরাপথে এবং বাকি ডোজ মাংসপেশিতে দিতে হবে। হিউম্যান টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন দিয়ে চিকিৎসা করলে ৩০০০-৬০০০ আইইউ পর্যন্ত ডোজ মাংসপেশিতে দিতে হবে। হিউম্যান টিটেনাস ইমিউনোগেøাবিউলিন শিরাপথে অথবা চামড়ার নিচে দেয়া যাবে না।